পাল্টে যাচ্ছে দেশের নাম। থাকছে না ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র। বিদ্যমান ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’-এর স্থলে ‘জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ’ গঠন এবং বিদ্যমান সংবিধানের চার মূলনীতি থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র বাদ দিয়ে সাম্য, বহুত্ববাদসহ পাঁচটি মূলনীতি করার প্রস্তাব করা হয়েছে সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশে। এছাড়া মূলনীতিতে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের সুপারিশ করা হয়েছে, যার মেয়াদ হবে চার বছর করে। সংসদের মতো রাষ্ট্রপতির মেয়াদও হবে চার বছর। রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবেন বৃহত্তর নির্বাচকমণ্ডলীর ভোটে। জীবদ্দশায় দুবারের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হতে পারবেন না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সংসদ ও স্থানীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে তিনটি অঙ্গের প্রতিনিধির সমন্বয়ে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠিত হবে। বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, অমানবিক নির্যাতন, অর্থপাচারসহ গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী কোনো দলের সদস্য হতে না পারা, আইসিটি আইনে সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি নির্বাচনে অযোগ্য বিবেচিত হবেন। কোনো আসনে মোট ভোটারের ৪০ শতাংশ ভোট না পড়লে পুনরায় নির্বাচন হবে। এমনসব সুপারিশ এসেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত চারটি সংস্কার কমিশনের সুপারিশে।
বুধবার সকালে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, দুর্নীতি দমন কমিশন ও পুলিশ সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। পরে বিকালে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের পক্ষে আইন, পরিবেশ ও স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান। এছাড়া সংস্কার কমিশনের প্রধানরাও পৃথক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তাদের সুপারিশগুলো তুলে ধরেন। পাশাপাশি তারা ওয়েবসাইটেও সুপারিশমালা আপলোড করেন।
প্রধান উপদেষ্টার সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশ সমন্বয় করার জন্য প্রতিবেদন জমা দেওয়া চারটি কমিশনসহ মোট ছয়টি কমিশনের মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। কমিশনগুলো বসে প্রাধান্যগুলো ঠিক করবে। এরপর ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে রাজনৈতিক সংলাপ শুরু হবে। তবে সংস্কার কমিশনগুলো তাদের কাজ আগেভাগে শেষ করতে পারলে ফেব্রুয়ারির প্রথমদিকে সংলাপ শুরুর সম্ভাবনা আছে বলে জানানো হয়।
সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশ
সংবিধান সংস্কার কমিশন তার সুপারিশে একটি কার্যকর গণতন্ত্র, মৌলিক মানবাধিকার সুনিশ্চিতকরণ ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সাতটি প্রধান বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করেছে। এগুলো হলো : স্বাধীনতা যুদ্ধের মহান আদর্শ এবং ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের জনআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন, ক্ষমতার প্রাতিষ্ঠানিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা, প্রধানমন্ত্রী পদের একচ্ছত্র ক্ষমতা কমানো, অন্তর্বর্তী সরকার কাঠামোর প্রস্তাব, বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ, শক্তিশালী স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা সুনিশ্চিতকরণ ও মৌলিক অধিকারের আওতা সম্প্রসারণ, সাংবিধানিক সুরক্ষা ও বলবৎযোগ্যতা নিশ্চিতকরণ।
কমিশন তার সুপারিশে জনগণের সার্বভৌম অধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ ও গণতন্ত্রকে সংবিধানের মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করে জনগণের জন্য একটি সংবিধান রচনাসহ বিধিবদ্ধ করার কথা বলা হয়েছে।
সংবিধানের বিদ্যমান প্রস্তাবনায় পরিবর্তন এনে ‘মুক্তিযুদ্ধের’ পরিবর্তে ‘জনযুদ্ধ’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এ যুদ্ধের চেতনা এবং ২০২৪ সালে ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে একতাবদ্ধ হয়ে গণতন্ত্র ও বৈষম্যহীনতার আদর্শে আদর্শ রাষ্ট্র ও সমাজ প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে। জনগণের সম্মতি নিয়ে এই সংবিধান ‘জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ’-এর সংবিধান হিসেবে গ্রহণ করার কথা বলা হয়েছে।
নাগরিকতন্ত্রের ক্ষেত্রে ‘প্রজাতন্ত্র’ ও ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ শব্দগুলোর পরিবর্তে ‘নাগরিকতন্ত্র
Post a Comment